ভবিষ্যৎ মলিন, ১৪-দলীয় জোটের নেতারা হতাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ম্যাজিক খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
Sunday, March 17th, 2024 11:51 am পরিবর্তনের তারিখ:
Sunday, March 17, 2024 12:13 PM
কাগজে-কলমে ১৪-দলীয় জোট আছে। এই জোটের প্রয়োজনও আছে বলতে চায় শরিকেরা। কিন্তু বাস্তবে ১৪ দলের ভবিষ্যৎ দেখছেন না জোটের নেতারা। তাই আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা বাম ঘরানার অন্য শরিকেরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু হয়েছে।
১৪-দলীয় জোটের সূত্র বলছে, শরিকেরা নিজেরা আগবাড়িয়ে বলবে না যে তারা ১৪-দলীয় জোটে নেই; বরং নিজেদের মতো করে ‘জনবান্ধব’ ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি অন্য শরিকদের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাবে।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনের আগে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে বাম ঘরানার ১১ দলের একটি জোট ছিল। সেই জোটে সাম্যবাদী দল, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টিসহ অন্যান্য দল ছিল। তারা একসঙ্গে ১৪ দলে যোগ দিয়েছিল। এর বাইরে ন্যাপ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১৪ দলের শরিক হয়।
১৪-দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ মলিন, জোরদার কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদ ও সংসদের বাইরে জনগণের কথা বলে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ওয়ার্কার্স পার্টি আগের ১১-দলীয় জোটকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাসদকেও পাশে চায় তারা। ১৪-দলীয় জোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষির ক্ষেত্রে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছে। জোটে আওয়ামী লীগের বাইরে সাংগঠনিকভাবে এই দুই দলেরই সারা দেশে তৎপরতা বেশি। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের বাইরে ১৪ দলের বাম ঘরানার শরিকদের এই দুই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। এমনকি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ঐক্য ন্যাপ ও শরিফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা শরিকেরা।
আওয়ামী লীগ বাদে ১৪ দলের অন্য শরিকদের ঐক্যের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে এখন তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতির মতো সর্বগ্রাসী ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে জোরালোভাবে মাঠে নামবে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের পর নামলে গণমানুষের মধ্যে সামান্যতম গুরুত্ব ধরে রাখতে হলে এর বিকল্প নেই বলে মনে করেন এসব শরিক দলের নেতারা।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ১৪-দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ মলিন, জোরদার কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদ ও সংসদের বাইরে জনগণের কথা বলে যাবে।
শরিক দলগুলোর নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাব কমে আসছে। ক্ষমতাসীন এই জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগও শরিকদের গুরুত্ব দিচ্ছে না।
জাসদের মহানগর শাখা ও যুব সংগঠন ইতিমধ্যে সীমিতভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। তবে ঈদুল ফিতরের পর দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনে দলবাজিসহ সরকারের নানা অনিয়ম-অসংগতি নিয়ে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করবে। এটাকে জাসদ বলছে, সুশাসনের দাবিতে সংগ্রাম। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাজাকারবিরোধী অবস্থানও থাকবে দলটির।
এ বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, ১৪-দলীয় জোট থাকবে কি না, সেটা সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ। তবে জোটের এখন কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, জাসদ নির্বাচনের পর অভ্যন্তরীণভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তাঁদের দলের এখন মূল কর্মসূচি হচ্ছে সুশাসনের জন্য সংগ্রাম। আর সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান। দলীয়ভাবেই এই লক্ষ্য অর্জনে রাজপথে থাকবেন তাঁরা।
১৪ দলের শরিক দলগুলোর সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোটের শরিক দলগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শরিক দলগুলোর অভ্যন্তরেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে; তৈরি হয়েছে সংকট।
তবে শরিক দলগুলোর কেউ কেউ মনে করছেন, জোটের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের একটা বৈঠক ডাকলে জোটে দূরত্ব কমে আসবে।
শরিক দলগুলোর নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাব কমে আসছে। ক্ষমতাসীন এই জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগও শরিকদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আসন সমঝোতায় আওয়ামী লীগের সেই মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এমন মনোভাবের পেছনে আওয়ামী লীগের যুক্তি হচ্ছে, সহযোগিতা পেয়েও ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা ‘নিজেদের পায়ে’ দাঁড়াতে পারেনি।
১৪ দলের শরিকদের, এমনকি এই জোটের ভবিষ্যৎ কী, এমন প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে। শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সরকার গঠনের অনেকটা সময় পার হলেও বিপর্যস্ত শরিকদের নিয়ে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি আওয়ামী লীগ।
তবে শরিক দলগুলোর কেউ কেউ মনে করছেন, জোটের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের একটা বৈঠক ডাকলে জোটে দূরত্ব কমে আসবে। নির্বাচনের পরপর জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ শরিক দলের দায়িত্বশীল নেতারা নিজেদের দলের ভেতরে চাপে পড়ে যান। তখন এই চাপ কাটাতে প্রধানমন্ত্রীর একটা সাক্ষাৎ চাইছিলেন নেতারা। সেটা হয়নি বলে তাঁরা এখন অনেকটাই হতাশ।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে না হলেও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে একটা বৈঠকের সম্ভাবনা আছে। তবে জোটের কার্যক্রম এখন স্থবির। তা কতটা চাঙা হবে, এ বিষয়ে তিনিও সন্দিহান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন ভাগে পেয়েছিল। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রেজাউল করিম ছাড়া সবাই হেরেছেন। ২০০৮ সালের পর কোনো সংসদেই এত কম আসন পায়নি শরিকেরা। এরপর সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালান জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা। এতেও সুবিধা করতে পারেননি তাঁরা।
আরো খবর পড়তে: ম্যাজিক খবরের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।