সরকারি লেডিস মার্কেট এখন পুরুষের কবজায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ম্যাজিক খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
Saturday, May 4th, 2024 11:10 am পরিবর্তনের তারিখ:
Saturday, May 4, 2024 11:11 AM
সীতাকুণ্ডে নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে গড়ে তোলা লেডিস মার্কেট এখন পুরুষের কবজায়। বরাদ্দের শুরুতে প্রকৃত নারী উদ্যোক্তাদের দোকান না দিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেওয়ায় শর্ত ভঙ্গ করে পুরুষ দোকানিরা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসা খুলে বসেন। এতে একদিকে নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়, আর অন্যদিকে ব্যর্থ হয় সরকারের উদ্দেশ্যও।
জানা যায়, উপজেলার নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা ও নারীদের নিরাপদে কেনাকাটার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে সীতাকুণ্ড পৌরসভা গেটে গড়ে তোলা হয় উপজেলার একমাত্র সরকারি লেডিস মার্কেটটি।
শর্ত ছিল এই মার্কেটের ২৪টি দোকানই বরাদ্দ পাবেন নারী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মার্কেট নির্মাণের পর সরকারের উদ্দেশ্য বিবেচনা না করে বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের স্ত্রীর নামে দোকানগুলো বরাদ্দ নেন। পরে সে দোকান বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন পুরুষ উপভাড়াটিয়াকে হস্তান্তর করেন তারা।
সরেজমিনে এই লেডিস মার্কেটে দেখা যায়, মার্কেটের ২৪টি দোকানের মধ্যে মাত্র একটি মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
বাকি ২৩টি দোকান এখন পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। নিচতলার ছয়টি দোকান থাই অ্যালুমিনিয়াম ও গ্রিলের ওয়ার্কশপ চলছে। আছে একটি টাইলস, একটি হারবালের দোকান। এ ছাড়া চারটি দোকান ময়দার গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ছাড়া আছে দলিল লেখকের একটি অফিস। এসব দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে যাঁরা এসব দোকান পরিচালনা করছেন, তাঁরা সবাই উপভাড়াটিয়া।
২ নম্বর দোকানে গেলে দোকানি নাজিম উদ্দিন জানান, এই দোকানটি বরাদ্দ ছিল বিএনপি নেতা আলী নেওয়াজ মাসুমের স্ত্রী মাসুমা বেগমের নামে। তাঁদের উপভাড়াটিয়া হিসেবে এক লাখ টাকা সেলামি ও মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় তিনি এখন দোকানটি চালাচ্ছেন। পাশের থাই অ্যালুমিনিয়াম ও ওয়ার্কশপে গেলে দেখা যায়, সেটিও একজন পুরুষ উপভাড়াটিয়া পরিচালনা করছেন।
একই অবস্থা দ্বিতীয় তলায়ও। সেখানে একটি মাত্র বিউটি পার্লার ও লেডিস টেইলার্সের দোকান নারী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই দোকানের মালিক রেহানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নিচতলায় গ্রিল ওয়ার্কশপ ও অন্যান্য দোকানের কারণে এই মার্কেটে নারীরা প্রবেশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। নামে মহিলা মার্কেট হলেও সব উপভাড়াটিয়া পুরুষ হওয়ায় মেয়েদের সব আশা শেষ। তবে তিনি নিজেও উপভাড়াটিয়া।
দ্বিতীয় তলার ২ নম্বর দোকান দলিল লেখক আবুল কালামের। তিনি বিএনপির নেতা বর্তমানে আমেরিকাপ্রবাসী গোফরান বাহারের স্ত্রী সখিনা আক্তারের কাছ থেকে মাসিক এক হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় এটি নির্মাণ ও বরাদ্দ হওয়ায় তারা তাদের মতো করে এগুলো বরাদ্দ দেয়।’
পৌর মেয়র বদিউল আলম জানান, তখন নেতাদের স্ত্রীর নামে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁরা প্রকৃত ব্যবসায়ী না হওয়ায় নিজেরা লাভ নিয়ে উপভাড়াটিয়াকে দিয়ে দেন। ইউএনও বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিলে তিনিও পাশে থাকবেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই মার্কেটের দোকানপাট কাদের নামে বরাদ্দ আছে, কিভাবে বরাদ্দ হয়েছিল তা জানা ছিল না। খতিয়ে দেখে আমি ব্যবস্থা নেব।’